মার্চ ২৮, ২০২৪ ৪:২৮ অপরাহ্ণ || ডেসটিনেশন বাংলা
Home » Post » অবশেষে ম্যালেরিয়ার ভ্যাকসিন আবিষ্কারে সফলতা

অবশেষে ম্যালেরিয়ার ভ্যাকসিন আবিষ্কারে সফলতা

কয়েক দশকের টানা গবেষণা আর প্রাণান্তকর চেষ্টার পর অবশেষে মশাবাহিত প্রাণঘাতী রোগ ম্যালেরিয়ার প্রথম ভ্যাকসিন আবিষ্কারে সফলতার মুখ দেখলেন বিজ্ঞানীরা। যুক্তরাজ্যের ওষুধপ্রস্তুতকারক কোম্পানি গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইন (জিএসকে) বিশ্বে প্রথমবারের মতো এই রোগের টিকা আবিষ্কারে সক্ষম হয়েছেন বলে বুধবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ঘোষণা দিয়েছে। ম্যালেরিয়ার কারণে প্রতি বছর পাঁচ লাখের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। যার মধ্যে প্রায় অর্ধেকই আফ্রিকার শিশু।

আফ্রিকার তিনটি দেশে ম্যালেরিয়ার আরটিএস,এস টিকা সফল পাইলট প্রকল্পের পর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক ড. টেড্রস আধানম গেব্রিয়েসাস বলেন, আজ একটি ঐতিহাসিক দিন।

টেড্রস জেনেভায় এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ম্যালেরিয়া গবেষক হিসেবে আমার কর্মজীবন শুরু করেছিলাম। আমি এই পুরনো ও ভয়ানক রোগের বিরুদ্ধে কার্যকর টিকা আবিষ্কারের অপেক্ষায় ছিলাম। আজ সেই দিন, এটি একটি ঐতিহাসিক দিন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আজ প্রথমবারের মতো বিশ্ব জুড়ে ম্যালেরিয়ার টিকা ব্যবহারের ঘোষণা দিয়েছে।

আরটিএস,এস টিকাটি মস্কিরিক্স নামে পরিচিত যা ব্রিটিশ ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইন (জিএসকে) আবিষ্কার করেছে। ২০১৯ সাল থেকে পাইলট প্রকল্পের আওতায় ঘানা, কেনিয়া ও মালাউইয়ের আট লাখের বেশি শিশুর ওপর এর প্রয়োগ করা হয়েছে।

ম্যালেরিয়ার এ টিকা ১৯৮৭ সালে তৈরি করেছিল জিএসকে। পরে দীর্ঘ সময় ক্লিনিকাল ট্রায়ালের মধ্য দিয়ে গেছে। চার বছরের বেশি সময় ধরে আফ্রিকার ছোট বাচ্চাদের ওপর চলা পরীক্ষায় এর সীমিত কার্যকারিতা পাওয়া গেছে। সাধারণ ম্যালেরিয়ার ক্ষেত্রে এটা ৩৯ শতাংশ কার্যকর আর গুরুতর ম্যালেরিয়ার ক্ষেত্রে এর কার্যকারিতার হার মাত্র ২৯ শতাংশ।

কিন্তু, গত আগস্টে লন্ডন স্কুল অফ হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিনের (এলএসএইটটিএম) নেতৃত্বে একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যখন ছোট বাচ্চাদের আরটিএস,এস ও অ্যান্টিম্যালেরিয়াল ওষুধ দেওয়া হয় তখন এটি হাসপাতালে ভর্তি বা মৃত্যুর হার ৭০ শতাংশ কমিয়ে দিতে সক্ষম।

বুধবার টেড্রস বলেন, এই টিকা নিরাপদ। এটি মারাত্মক প্রাণঘাতী ম্যালেরিয়াকে উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করবে বলে আশা করি। এ টিকা অত্যন্ত সাশ্রয়ী হবে বলে ধারণা করছি। ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে এ টিকা ব্যবহার করলে প্রতি বছর হাজার হাজার তরুণের জীবন বাঁচাতে পারে।

তিনি বলেন, ম্যালেরিয়া হাজার বছর ধরে আমাদের সঙ্গে আছে। ম্যালেরিয়ার টিকার স্বপ্ন দীর্ঘদিনের। কিন্তু এতো দিন তা অধরা ছিল। ম্যালেরিয়ার টিকা তৈরির মাধ্যমে জিএসকের ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে চলমান চেষ্টা ফলে আজ জনস্বাস্থ্যের ইতিহাসের পথ পরিবর্তন হয়েছে। আমাদের এখনও দীর্ঘ রাস্তা পাড়ি দিতে হবে। কিন্তু এই রাস্তা ধরেই আমরা দীর্ঘ পথ পাড়ি দেব।

বিশেষজ্ঞরা আশা করছেন, ডব্লিউএইচওর ঘোষণার ফলে প্রায় শতাব্দী ধরে চলমান টিকা আবিষ্কারের প্রচেষ্টাকে আবারও পুনরুজ্জীবিত করবে।

জিএসকের প্রধান বৈশ্বিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা টমাস ব্রেয়ার বলেন, জিএসকে গর্বিত যে আরটিএস,এস আমাদের যুগান্তকারী ম্যালেরিয়া টিকা। আমাদের দল ও সহযোগীদের কয়েক দশকের এই চেষ্টা সফল হয়েছে। এখন সাব-সাহারান আফ্রিকা অঞ্চলের শিশুদের মধ্যে এটা ছড়িয়ে দিতে হবে।

তিনি বলেন, দীর্ঘ প্রতীক্ষিত এই যুগান্তকারী আবিষ্কার এ অঞ্চলে ম্যালেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াইকে পুনরুজ্জীবিত করতে পারে, যখন ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণে অগ্রগতি থমকে গিয়েছিল।

তবে সেই ঐতিহাসিক দিনে সাফল্য উদযাপনের পাশাপাশি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের বিষয় হলো অর্থের জোগান। যাতে সেই ম্যালেরিয়া টিকা আফ্রিকার শিশুদের কাছে পৌঁছে যায়।

বিষয়টি নিয়ে স্বাস্থ্য সংস্থার টিকা সংক্রান্ত বিভাগের কর্মকর্তা কেট ও’ব্রায়েন বলেছেন, এটাই পরবর্তী গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে চলেছে। তারপর আমরা টিকার স্কেলিংয়ের বিষয়টি নির্ধারণ করব। কোথায় টিকা সবচেয়ে বেশি কার্যকরী হবে এবং কীভাবে তা প্রদান করা হবে, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

এছাড়াও, চলতি বছরের শুরুর দিকে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনার ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা বলেছিলেন, তাদের তৈরি একটি টিকা ডব্লিউএইচও লক্ষ্যমাত্রার ৭৫ শতাংশ কার্যকারিতা পূরণে সক্ষম। বুরকিনা ফাসোর সাড়ে চারশ শিশুর ওপর ১২ মাসের বেশি সময় ধরে চলা পরীক্ষায় এই টিকার ৭৭ শতাংশ কার্যকারিতা পাওয়া গেছে। বর্তমানে চারটি দেশের ৪ হাজার ৮০০ শিশুর ওপর বৃহৎ আকারে পরীক্ষা চলছে।

২০১৯ সালে ৪ লাখ ৯ হাজারের বেশি মানুষ মশাবাহিত রোগে মারা গিয়েছিল, তাদের অধিকাংশই আফ্রিকায়। নিহতদের মধ্যে ২ লাখ ৭০ হাজারের বেশি ছিল পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু।

ম্যালেরিয়ার মূলে রয়েছে প্লাজমোডিয়াম গোত্রের পরজীবী। আর এ রোগ মানুষের শরীরের পৌঁছায় স্ত্রী অ্যানোফিলিস মশার মাধ্যমে।

আরটিএস,এস টিকা শিশুদের শরীরে প্লাজমোডিয়াম ফ্যালসিপেরামের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করবে। যে পাঁচটি প্রজাতির প্লাজমোডিয়ামের কারণে ম্যালেরিয়া হয, তার মধ্যে প্লাজমোডিয়াম ফ্যালসিপেরাম সবচেয়ে প্রাণঘাতী। আর এর প্রকোপ আফ্রিকায় সবচেয়ে বেশি।

error: Content is protected !!